SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - পলিমার | NCTB BOOK

মেলামাইনের থালা-বাসন, বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড, কার্পেট, পিভিসি পাইপ, পলিথিনের ব্যাগ, পাটের ব্যাগ, সিল্কের কাপড়, উলের কাপড়, সুতি কাপড়, নাইলনের সুতা, রাবার – এসব জিনিস আমাদের খুবই পরিচিত, আমরা সবসময়েই এগুলো ব্যবহার করছি। এগুলো সবই পলিমার। পলিমার (Polymer) শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ পলি (Poly) ও মেরোস (Meros) থেকে। পলি শব্দের অর্থ হলো অনেক (Many) এবং মেরোস শব্দের অর্থ অংশ (Part)। অর্থাৎ অনেকগুলো একই রকম ছোট ছোট অংশ জোড়া দিয়ে যে একটি বড় জিনিস পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে পলিমার। তোমরা একটা লোহার শিকলের কথা চিন্তা করতে পার। লোহার ছোট ছোট অংশ জোড়া দিয়ে একটি বড় শিকল তৈরি হয়। অর্থাৎ বড় শিকলটি হলো এখানে পলিমার। রসায়ন বিজ্ঞানের ভাষায়, একই ধরনের অনেকগুলো ছোট অণু পর পর যুক্ত হয়ে পলিমার তৈরি করে। যে ছোট অণু থেকে পলিমার তৈরি হয়, তাদেরকে বলে মনোমার (Monomer)।

আমরা যে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করি, তা হলো “ইথিলিন” নামের মনোমার থেকে তৈরি পলিমার। একইভাবে আমরা যে পিভিসি পাইপ (PVC) ব্যবহার করি, তা হলো ভিনাইল ক্লোরাইড নামের মনোমার থেকে তৈরি পলিমার। তবে সব সময় একটি মনোমার থেকেই পলিমার তৈরি হবে এমন কোনো কথা নেই, একের অধিক মনোমার থেকেও পলিমার তৈরি হতে পারে। যেমন: বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড বা বৈদ্যুতিক সুইচ হলো বাকেলাইট নামের একটি পলিমার, যা তৈরি হয় ফেনল ও ফরমালডিহাইড নামের দুটি মনোমার থেকে। আবার মেলামাইনের থালা-বাসন হলো মেলামাইন রেজিন নামের পলিমার, যা তৈরি হয় মেলামাইন ও ফরমালডিহাইড নামের দুটি মনোমার থেকে। শুরুতে আমরা পলিমারের যে উদাহরণগুলো দেখেছি, তাদের মধ্যে কিছু কিছু প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। এদেরকে আমরা বলি প্রাকৃতিক পলিমার ।

এখন তোমরা নিজেরাই বল শুরুতে দেওয়া উদাহরণগুলোর মধ্যে কোনগুলো প্রাকৃতিক পলিমার?

পাট, সিল্ক, সুতি কাপড়, রাবার—এগুলো প্রাকৃতিক পলিমার। অন্যদিকে মেলামাইন, রেজিন, বাকেলাইট, পিভিসি, পলিথিন—এগুলো প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, শিল্প-কারখানায় কৃত্রিমভাবে তৈরি করতে হয়। তাই এরা হলো কৃত্রিম পলিমার।

৬.১.১ পলিমারকরণ প্রক্রিয়া

মনোমার থেকে পলিমার তৈরি হয় নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মনোমার সংযুক্ত করে পলিমার তৈরি হয়, তাকেই বলে পলিমারকরণ প্রক্রিয়া। সাধারণত পলিমারকরণে উচ্চ চাপ এবং তাপের প্রয়োজন হয়। যদি দুটি মনোমার একসাথে যুক্ত হয় তাহলে উৎপন্ন পদার্থটি কেমন হবে? বুঝতেই পারছ তাহলে উৎপন্ন পদার্থটিতে দুটির বেশি মনোমার থাকতে পারবে না। আমরা এটিকে এভাবে লিখতে পারি :

১টি মনোমার + ১টি মনোমার → মনোমার-মনোমার কিংবা এটাকে আমরা অন্যভাবেও লিখতে পারি (মনোমার)2

তিনটি মনোমার হলে উৎপন্ন পদার্থটিতে তিনটি মনোমার থাকবে অর্থাৎ আমরা লিখতে পারি: ১টি মনোমার + ১টি মনোমার + ১টি মনোমার → মনোমার - মনোমার - মনোমার বা ( মনোমার ও

আমরা যদি n সংখ্যক মনোমার নিয়ে একটি পলিমার বানাতে চাই, তাহলে পলিমারকরণ প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত উপায়ে দেখানো যায় :

মনোমার + মনোমার + মনোমার → (মনোমার) n কিংবা n মনোমার → ( মনোমার) n

আমরা পলিথিনের কথা বলেছি, তোমরা কি জান কিভাবে পলিথিন তৈরি হয়? ইথিলিন গ্যাসকে ১০০০-১২০০ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ২০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে পলিথিন পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে পলিমারকরণ দ্রুত করার জন্য প্রভাবক হিসেবে অক্সিজেন গ্যাস ব্যবহার করা হয়। n (ইথিলিন (উচ্চতাপ ও চাপ ) → পলিথিন

(02 প্রভাবক)

কিংবা,

n (CH₂ = CH₂)

(উচ্চতাপ ও চাপ )

(02 প্রভাবক) → ( CH2 - CH,-)n

তবে উচ্চ চাপ পদ্ধতি সহজসাধ্য না হওয়ায় বর্তমানে পদ্ধতিটি তেমন জনপ্রিয় নয়। এখন টাইটেনিয়াম ট্রাইক্লোরাইড (Ticl.) নামক প্রভাবক ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডলীয় চাপেই পলিথিন তৈরি হয়।

Content added By

Promotion